ছাত্ররাজনীতি প্রশ্নে বুয়েটের মডেল অন্য ক্যাম্পাসেও কেন অনুকরণীয়
আবরার ফাহাদকে নির্যাতন ও হত্যার জেরে প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ রয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট)। এই সময়ের মধ্যে যখনই ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ক্যাম্পাসে সচল হতে চেয়েছে, তখনই সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধ গড়ে তুলছেন, বিক্ষোভ-সমাবেশ করছেন। শিক্ষার্থীদের এসব প্রতিবাদে অনেকটাই স্পষ্ট, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই ছাত্ররাজনীতিতে আগ্রহী নন।
কিন্তু কেন তাঁরা ছাত্রসংগঠনগুলোকে অপছন্দ করছেন? বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্রসংগঠনগুলোর যেখানে সক্রিয় ভূমিকা ছিল, সেই জায়গা থেকে একটি বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতি বিমুখিতা দেখিয়ে আমাদের জন্য কী বার্তা দিচ্ছে? বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি
আবরার ফাহাদকে নির্যাতন ও হত্যার জেরে প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ রয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট)। এই সময়ের মধ্যে যখনই ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ক্যাম্পাসে সচল হতে চেয়েছে, তখনই সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধ গড়ে তুলছেন, বিক্ষোভ-সমাবেশ করছেন। শিক্ষার্থীদের এসব প্রতিবাদে অনেকটাই স্পষ্ট, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই ছাত্ররাজনীতিতে আগ্রহী নন।
কিন্তু কেন তাঁরা ছাত্রসংগঠনগুলোকে অপছন্দ করছেন? বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্রসংগঠনগুলোর যেখানে সক্রিয় ভূমিকা ছিল, সেই জায়গা থেকে একটি বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতি বিমুখিতা দেখিয়ে আমাদের জন্য কী বার্তা দিচ্ছে? বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে, শিক্ষার্থীদের জন্য কেবল পড়াশোনা ও গবেষণার সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টিতে বুয়েট প্রশাসন যে ভূমিকা রাখছে, সেটি কি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অনুকরণীয় হয়ে উঠছে?
এসব নিয়ে আলোচনা করার আগে পাঠক চলুন আমরা ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে একটু আলোচনা করি।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, আশির দশকে স্বৈরাচার পতন আন্দোলনে এই দেশের আপামর জনগোষ্ঠীর মধ্যে জনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কারণ, এই তরুণদের শক্তিকেই সারা বিশ্বের শাসকগোষ্ঠীরা ভয় পায়, সমীহ করে কিংবা ক্ষমতার মসনদের নড়াচড়া করে। ফলে পঞ্চাশ বছরের অধিক সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ছাত্ররাজনীতির চর্চা চলে আসছে।
মূল রাজনৈতিক দলগুলোর ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন হিসেবে ছাত্রসংগঠন তৈরি করেছে। এসব রাজনৈতিক দলকে বিভিন্ন সময়ে ‘ক্ষমতা’ পাকাপোক্তকরণে ছাত্রসংগঠনগুলো প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে একটা বড় ভূমিকাও রাখছে। অন্যদিকে দেশের সংকটকালে এসব ছাত্রসংগঠন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে।
বড় দৃষ্টিতে ছাত্রসংগঠনগুলোর অতীতের এসব ভূমিকার কারণে ‘ছাত্ররাজনীতি’ সাধারণ মানুষ গ্রহণ করলেও কয়েক দশক ধরে ছাত্ররাজনীতি ‘শিক্ষা’ প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক তৈরি করে আসছে। যখন কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় গিয়েছে, তখনই বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজগুলোয় ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনগুলো আধিপত্য, দাপট, চাঁদাবাজি, শিক্ষার্থী নিপীড়ন, খুনোখুনিতে মেতে উঠেছে।
মানুষ হওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ করতে এসে লাশ হয়ে ফিরেছেন কয়েক ডজন শিক্ষার্থী। এসব লাশের বোঝা স্বভাবত পরিবারগুলোর কাছে ভারী হয়ে গিয়েছে। স্কুল-কলেজের মেধাবী ছাত্রটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে ছাত্ররাজনীতির জাঁতাকলে নিজের ভবিষ্যৎকে বিকিয়ে দিয়েছেন, হামলা-
মামলায় জড়িয়ে পড়াশোনাকে বিসর্জন দিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় এসব নিয়মিত ঘটনা হলেও সাম্প্রতিক সময়ে তরুণদের মধ্যে ‘ছাত্ররাজনীতি’ বিষময় করে তুলেছে। পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়বে, অমুক বিশ্ববিদ্যালয়ের হল দখল, তমুককে মারধর করে হল থেকে বের করে দেওয়া, চাঁদার টাকা দিতে না পারলে মারধর, ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, অন্যের জিনিস কেড়ে নেওয়াসহ নানান অপকর্মের কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতিকে ‘ভয় পান’ কিংবা সমীহ করে চলেন।
বলতে দ্বিধা নেই, বিভিন্ন সময়ে হামলা-সংঘর্ষের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ থেকেছে, সেশনজট তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে। যদিও এসব অপকর্মের সময়ে অধিকাংশ সময় ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনগুলো জড়িয়ে থাকলেও বিপক্ষের শিবিরের ছাত্ররাজনীতিতেও আধিপত্য, হাঙ্গামার ঘটনা শিক্ষার্থীদের সামগ্রিকভাবে ছাত্ররাজনীতির প্রতি একধরনের ‘নিম্নমানের’ ধারণা তৈরি করছে।
Comments
Post a Comment